সন্তানের হাঁটতে শেখায় দেরি দেখে অনেক বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। একই
বয়সের অন্য শিশুকে হাঁটতে দেখেই মূলত এই চিন্তার উপসর্গ দেখা যায়।
তবে অনেকেই হয়ত জানেন না, সব শিশু একই সময়ে হাঁটে না; কেউ কম সময় নেয়, কেউ খানিকটা বেশি।
এ
সম্পর্কে অভিভাবক-বিষয়ক কয়েকটি ওয়েবসাইটে জানানো হয়, সাধারণত শিশু তার
প্রথম জন্মদিনের আশেপাশে ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ শুরু করে। তবে ৯ থেকে ১৮
মাসের মধ্যেই শিশুরা হাঁটতে শিখে যায়।
হাঁটার আগে হামাগুড়ি দেওয়া
একটি স্বাভাবিক বিষয়। হামাগুড়ি না দিয়ে হাঁটতে শুরু করলেও অবাক হওয়ার কারণ
নেই; কোনো কোনো শিশু হামাগুড়ি না দিয়েই হাঁটতে শুরু করে!
শিশুর
শরীরের বিকাশের এই পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সে তার হাত এবং পায়ের
ব্যবহার করতে শিখছে কিনা, ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে কিনা।
গড়াগড়ি
বা হামাগুড়ি দেওয়া, কিংবা কোনো কিছু ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা যদি শিশুর মধ্যে
দেখা যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার ছোট্ট বাবুর হাঁটা খুব বেশি দূরে নয়।
লক্ষ রাখতে হবে:
শিশু কী এসব করতে পারছে? প্রতি মাসেই কী তার শরীরের নড়াচড়ায় উন্নতি আসছে?
আসছে পরিবর্তন? সে কী মাটি থেকে শরীরটাকে উপরে তুলে আনার চেষ্টা করছে?
প্রথম এক বছরে শিশুর মধ্যে এরকম কোনো বিষয় দেখা না গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
শিশুর হাঁটার ধাপ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাঁড়াতে শেখার পর থেকে এক হাজার ঘণ্টার মধ্যে কোনো কিছু
ধরা ছাড়াই শিশু হাঁটতে শুরু করে। তবে অভিভাবকরা নানা ভাবেই তাকে হাঁটার
জন্য উৎসাহী করে তুলতে পারেন।
জন্মের পর: এই সময়
শিশুর কোমল দেহে ক্রমেই পেশিগুলো সুগঠিত হতে থাকে। অভিভাবকরা এক্ষেত্রে
শিশুর হাত-পা প্রসারণ ও সঙ্কোচন করার মাধ্যমে পেশি সুগঠিত করতে সহায়তা করতে
পারেন।
খেলনা বা আকৃষ্ট হবে এমন জিনিসগুলো শিশুর নাগালের বাইরে
রাখলে নিজ থেকেই তার মধ্যে সেগুলো ধরার প্রেরণা তৈরি করবে, যা তাকে হাত-পা
নড়াচড়া করতে শেখাবে। একটা সময় সে নিজেই বসতে শিখে যাবে।
বসতে শেখার পর: দেহের
ভারসাম্য তৈরি হওয়া মুখ্য। এই সময়ে দৃষ্টি সীমানার মধ্যে খেলনাজাতীয় বস্তু
ধরে তার মধ্যে আলোড়ন তৈরি করতে হবে। তখন সে সেসব খেলনা ধরার জন্য হামাগুড়ি
দেওয়া শিখতে শুরু করবে।
আর এই সময়ে শিশুর মেরুদণ্ড, ঘাড়, পা ও বাহু শক্ত হয়ে হাঁটার উপযোগী হতে শুরু করে।
দাঁড়াতে শেখার পর: হাড় মজবুত হওয়ার পর শিশু নিজ থেকেই কোনো কিছু
ধরে দাঁড়াতে চেষ্টা করবে। শিশুকে দুই হাতে ধরে সামনে-পেছনে হাঁটানোর
মাধ্যমে পায়ের কদম ফেলতে সহায়তা করা যায়। এতে শিশুর হাঁটতে শেখার সময় কমিয়ে
আনা সম্ভব। একটা সময় সে নিজ থেকেই হাঁটতে চাইবে। শুরুতে ঘরের আসবাব বা
দেয়াল ধরে সে একাই হাঁটার চেষ্টা করবে।
প্রথম জুতা: হাঁটতে শুরু করার পর যে বিষয় অভিভাবকদের মাথায় ঘোরে তা হল- পাদুকা। অনেকেই ভাবেন জুতা কখন পরাবেন, বা কেমন পরাবেন।
সাধারণত
ঘরের মধ্যে শিশুকে খালি পায়ে হাঁটানো বুদ্ধিমানের কাজ। এতে শিশু সহজেই
পিচ্ছিল মেঝেতেও পা ফেলতে পারবে আর ভারসাম্য ধরে রাখতেও সহায়তা করে।
তবে
একটি বয়সের পর বাইরে জুতা ব্যবহার করা উচিত। বিজ্ঞান বলে সকালের শিশুর
পায়ের যে আকার থাকে বিকেলের মধ্যে তা পাঁচ শতাংশ স্ফীত হয়ে ওঠে। তাই পায়ের
আকারের চেয়ে একটু বড় জুতা ব্যবহারই বুদ্ধিমানের কাজ।
সতকর্তা:
শিশু হাঁটতে শেখার পর সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হল তার নড়াচড়া, সব কিছুর প্রতি
কৌতুহল। আর কৌতুহল থেকেই সে তার দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকা সব বস্তুর প্রতিই
আকৃষ্ট হয়।
এজন্য ঘরে নিচু আসবাবের উপর রাখা ফুলদানি বা কাচের বস্তু
সরিয়ে রাখা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া বৈদুতিক তার, সকেট বা এ ধরনের ভয়ঙ্কর কিছু যেন
তার নাগালে না থাকে সে দিকে নজর রাখতে হবে।
ওয়াকার কি ব্যবহার করবেন? অনেক অভিভাবককেই দেখা যায় তার শিশুর হাঁটা শেখা
তরান্বিত করতে ওয়াকার দেওয়ার বিষয়ে বেশ আগ্রহী। তবে সেসব অভিভাবক হয়ত জানেন
না, এটি বেশ বিপদজনক এবং হাঁটা শিখতে তেমন সহায়তা করে না, বরং নিজের পায়ে
হাঁটার আগ্রহ নষ্ট করে দেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, এটি ব্যবহারের ফলে শিশুর দেহ সুগঠিত হয় না। অনেকক্ষেত্রে হাঁটতে শেখায় বিলম্ব ঘটায়।
এসব
বিষয় বিবেচনা করেই কানাডায় এই ওয়াকার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর
যুক্তরাষ্ট্রের পেডিয়াট্রিক একাডেমিও সেদেশে এরকম নিষেধাজ্ঞার পক্ষে মত
দিয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক জার্নালের সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।
Comments
Post a Comment