'নরক থেকে ফিরে এলাম', করোনা আক্রান্তের পর সুস্থ ব্যক্তির অভিজ্ঞতা
২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ১৩:২৫ |
চীনের
উহান শহরের বাসিন্দা টাইগার ইয়ে (২১)। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ দেয় তার মধ্যে। অসুস্থ হওয়া থেকে শুরু করে
সুস্থ হয়ে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিনি।
টাইগার ইয়ে জানান, ১৭ জানুয়ারি আমার মাংসপেশীতে ঘা দেখা দেয়। হালকা
জ্বর ছিল। তবে এজন্য বিচলিত হওয়ার মতো বিষয় ছিল না। তবে ফিরে তাকালে দেখা
যায় এটা ভীতিকর। কারণ আমার বাড়ি এবং ভাষা শিক্ষা স্কুল উহানের বন্যপ্রাণী
বিক্রির বাজারের কাছেই।
টাইগার বলেন, মাংসপেশীর সমস্যা সারিয়ে তোলার জন্য কিছু ট্যাবলেট খাই।
কারণ, আমি ভেবেছিলাম, এটা সাধারণ কোনো সমস্যা। কিন্তু এখন আমার মনে হচ্ছে,
চিকিৎসা করানোর উৎকৃষ্ট সময় নষ্ট করেছি।
তিনি আরো বলেন, কীভাবে এই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলাম, সে ব্যাপারে আমার
কোনো ধারণা নেই। স্কুলের পাশেই রেস্টুরেন্টে সচরাচর খেতাম। আমি বেশিরভাগ
সময় বাইরে বেরও হই না, কারণ আবহাওয়া খুব ঠান্ডা। ক্লাস শেষ হলেই বাড়ি ফিরে
আসি। আমার চারপাশের সবাইকে মাস্ক পরা দেখে নিজেও মাস্ক পরা শুরু করি
কয়েকদিন আগে থেকে।
কিন্তু ২১ জানুয়ারি আর শরীর চলছিল না। সে কারণে বিষয়টি বাবাকে জানাই।
তিনি বুঝতে পারেন, আমার সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটছে। সে কারণে তিনি আমাকে বাড়ি
চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ওই দিন বিকেলে বাড়ি ফিরে যাই। রাতে মা বললেন, জ্বর
না কমলে পরদিন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন। কিন্তু জ্বর না কমার কারণে
রাতেই টংজি হাসপাতালে নেওয়া হলো আমাকে।
যখন উহানে লকডাউন শুরু হচ্ছিল, ওই সময় বাবা আমাকে বাড়িতে কোয়ারেনটাইনে
রাখলেন। ওই সময় আমি সিনেমা দেখে সময় পার করার কথা ভাবি। সে অনুসারে
পর্যাপ্ত পরিমাণে নুডলস কিনে নিয়ে রাখি।
২২ জানুয়ারি থেকে নিজে নিজেই কোয়ারেনটাইনে থাকা শুরু করি। আমার দাদি
মাস্ক পরে নুডলস রান্না করে আমার কাছে দিত। আমি যেটুকু পারতাম খেতাম। তারপর
বাকি অংশ ফেলে দিতাম।
তিনি আরো বলেন, ২৫ জানুয়ারি পরীক্ষা করানোর পর জানলাম- আমার ফুসফুস
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২৬ জানুয়ারি উঠে দাঁড়ানোটাই আমার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠলো।
জ্বরের মাত্রা ব্যাপক আকার ধারণ করলো। আমার মনে হতে লাগল, নরকে যাচ্ছি আর
বেঁচে ফিরে আসছি। আমার পাকস্থলীতেও ব্যথা হচ্ছিল। আধ্যাত্মিক কোনোকিছুর
সহায়তা ছাড়া আর সেরে উঠবো বলে মনে হচ্ছিল না। কিন্তু আমি স্বাভাবিক থাকার
চেষ্টা করি এবং পৃথিবীকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিতে থাকি।
এদিকে আমার ভাই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আমার দাদির জ্বর চারদিন থেকেই সেরে গেছে অবশ্য।
হাসপাতাল ছিল রোগীতে ঠাসা। জীবনে প্রথমবারের মতো ডাক্তারদের এই বেশে
দেখেছি। আমার কাছে যারাই এসেছেন, একেবারে মাস্ক, স্যুট, মোজা পরে নিজেদের
সুরক্ষা নিশ্চিত করেই এসেছেন। আর আমি সেসব দেখে ভাবতে থাকি, চরম পর্যায়ের
খারাপ কিছু আমার সঙ্গে ঘটতে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, একজন করে রোগী আসার ঘটনা দেখিনি। সবসময় অনেক রোগী আসছিল।
তবে হাসপাতালে অন্য রোগীরা আসলেও বিচলিত হয়নি। কারণ, করোনার চিকিৎসা
দেওয়ার মতো সব রকম প্রস্তুতি সেখানে ছিল।
৪ ফেব্রুয়ারি রক্ত পরীক্ষার পর উন্নতির কথা জানা যায়। তিন সপ্তাহ করোনার সঙ্গে লড়ে অবশেষে বেঁচে গেলাম এ যাত্রায়।
Comments
Post a Comment