বাড়ির নির্মাণে কত টুকু- রড, সিমেন্ট এবং ইটের প্রয়োজন

  বাড়ির নির্মাণে কত টুকু- রড , সিমেন্ট এবং ইটের প্রয়োজন। সবারই স্বপ্ন থাকে মনের মত একটি সুন্দর বাড়ি করার। কিন্তু বাড়ি তৈরি করতে নির্মাণকাজের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণের দরকার হয়। কিন্তু আপনি জানেন কি … বাড়ি তৈরিতে কতটুকু- রড , সিমেন্ট , ইটের প্রয়োজন। নিন্মে লেখায় দেওয়া হিসাবটি জেনে রাখুন।   বাড়ি নির্মাণে কতটুকু- রড , সিমেন্ট , ইটের প্রয়োজন। ✓ ১০ ” ওয়াল গাথুনীতে প্রতি ০১ ’ ( স্কয়ার ফিট) গাথুনীতে ১০ টি ইট লাগে। ✓ ০৫ ” ওয়াল গাথুনীতে প্রতি ০১ ’ ( স্কয়ার ফিট) গাথুনীতে ০৫ টি ইট লাগে। ✓ গাথুনী এব প্লাস্টারে ০১ বস্তা সিমেন্টে ০৪ বস্তা বালি। তবে ০৫ বস্তাও দেওয়া যায়। ✓ নিচের ছলিং এ প্রতি ০১ ’ ( স্কয়ার ফিট) এর জন্য ০৩ টি ইট লাগে। পিকেট ইট দিয়ে খোয়া করতে হয়। ✓ ০৯ টি পিকেট ইট দিয়ে ০১ সিএফটি খোয়া হয়। সিএফটি অর্থা ৎ ঘনফুট। ✓ এসএফটি অর্থা ৎ দৈর্ঘ্য এবং প্রস্তের দিক দিয়ে। কলাম এবং লিংটেল এর হিসাব সিএফটি তে করতে হয়। ✓ ইঞ্চিকে প্রথমে ফুটে আনতে হবে। ( ১০ ” ÷ ১২ = ০.৮৩৩)এবং গাথুনীতে ও প্লাস্টারের হিসাব এসএফটি তে করতে হয়।   ✓ ১ ঘনমিটার ইটের গাথুনীর ও...

বালি কনা


বালি কনা বা ফাইন এগ্রিগেটের পরিচিতি।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন নির্মাণ কাজের গুরুতবপুর্ণ্য উপাদান হচ্ছে বালি বা  ফাইন এগ্রিগেট। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বালি আবহাওয়া জনিতে কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে থাকে। শিলার ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিচুর্নন হতে তৈরি গোলাকার কনাকৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনার সমষ্টি হল বালি। বালির রাসায়নিক নাম হল সিলিকা বা সিলিকন (Si)প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রকারেরে বালি পাওয়া যায়। যেমনঃ গোলাকার, কোনাকার ও ধারালো।  ক্ষয়প্রাপ্ততার উপর নির্ভর করে, বালির আকার ও আকৃতি ভিন্ন হয়ে থাকে। বেশীর ভাগ বালি সমুদ্র, নদীর উপকুলে বা নদীর তলদেশে বালি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে সিলেটে ভাল মানের বালি পাওয়া যায়। বালি কনার পরিমাপ (FM) ফাইনাস মোডুলাস এ মাপা হয়। বালির (FM) ফাইনাস মোডুলাস ২.৫ হলে ভাল হয়। বাড়ি নির্মাণের এ উপাদানটির জন্য নদীরে তীরের বালি সবচেয়ে সহজলভ্য উস। তবে বালিতে কোন রকম কাঁদা মাটি, ময়লা, জৈব অপদ্রব্য থাকা যাবে না।

 

বালি কনা বা ফাইন এগ্রিগেটের গুনাগুন সহজেই জেনে নিন।

হাতের মুঠিতে সামান্য বালি নিয়ে কিছুক্ষণ ঘষে ফেলে দিন। হাতের মুঠ খুলে দেখুন। ভাল মানের বালি হাতের মুঠিতে আটকে থাকবে না। একটি কাচের জগ বা খালি পানিতে বোতলের মধ্য কিছু পরিমাণ বালি নিইয়ে তাতে এর দ্বিগুণ পরিমাণ পানি ঢালুন। কাচের জগ বা বোতলের মুখ বন্ধ করে কিছু ক্ষণ ভালোভাবে ঝাঁকান। এর পর এক ঘন্টা রেখে দিন। বালির মান অনুযায়ী সেখানে আলাদা আলাদা স্তার তৈরি হবে।যা আপনাকে সহজে বুঝতে সাহায্য করবে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সাইটে বালির প্রথমিক পরীক্ষার ও মন্তব্য।

১।ভাল বালি হাতের তালুতে নিয়ে ঘষা দিলে, কোন প্রকার ময়লা হাতের তালুতে লেগে থাকবে না।
২।বালি খালি চোখে পরিক্ষা করলে, যদি বালির আঁকার কোনাকার ও ধারালো দেখা যায়। তাহলে এটাই সবচেয়ে ভাল বালি

৩।বালুর মধ্য যদি পাঁথর, কয়লার টুকরা, অথবা মৃত বালি থাকে তাহলে ব্যাবহার না করাই ভাল।
৪।জিহবায় লাগিয়ে লবনাক্ত স্বাদ অনুভূত হলে এমন বালি ব্যাবহার করা যাবে না।
৫। এক গ্লাস পানিতে সামান্য বালি নিয়ে কাঠি/অন্য কিছু দিয়ে নাড়া দিয়ে থিতানোর জন্য কিছু সময় রেখে দাও।
থিতিয়ে গেলে পানির নিচের বালির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। কাচের গ্লাসের তলায় বালির স্তরে উপর পলি এবং সর্ব উপরে কাঁদা দেখা গেলে এমন বালি নির্মাণ কাজে ব্যাবহার করা যাবে না।

৬। একক আয়তনের বালির ওজন নিয়ে পরে পানিতে ধুয়ে পুনরায় আবার ওজন নিতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বারের ওজনের পার্থক্য থেকে অপদ্রব্যের পরিমাণ জানা যায়।

৭।  একটু কষ্টিক সোডা ও কিছু পরিমাণ বালি বোতলে নিয়ে বোতলের মুখ বন্ধ করে ঝাকিয়ে ২৪ ঘন্টা রেখে দিন। যদি দ্রবোর রং পরিবর্তন হয়ে বাদামি রঙ হয়। তাহলে বুঝতে হবে বালিতে রাসায়নিক দ্রব্যর উপস্থিতি আছে।

 

বালির সাত প্রকারের ব্যবহার নিচে দেখানো হল।

১। ইটের গাঁথুনির মসলা তৈরিতে বালির ব্যাবহার করা হয়।

২। দেওয়ালে প্লাস্টারিং করতে বালির ব্যাবহার করা হয়।

৩। পয়েন্টিং এর কাজে বালির ব্যাবহার করা হয়।

৪। সকল প্রকার কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজে বালি ব্যাবহার হয়।

৫। শীট ও গ্লাস তৈরিতে বালি ব্যাবহার করা হয়।

৬। ইটের সলিং দিতে হয়ে বালির ব্যাবহারের প্রযোজন হয়।

৭। বিটুমিনাস রাস্তার সিলকোটের উপর প্রযোগের কাজে বালির দরকার হয়।

 

প্রপ্তির উস অনুসারে বালিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১। পিট বালি।

মাটি গর্ত করে এক প্রকারের বালি পাওয়া যায়। যা মসৃণ, কোনকৃতি ও ক্ষতি কারক লবন থেকে মুক্ত। এই প্রকারের বালি সাধারণত মর্টারের কাজে ব্যাবহার করা হয়।

২। নদীর বালি।

নদির বালি সাধারণত নদীর উপকুলে পাওয়া যায়। যা চিকন ও গোলাকার হয়ে থাকে। যা পিট বালি আপেক্ষা ছোট তাই এটি প্লাস্টারিং কাজে ব্যাবহার করা হয়।

৩। সমুদ্রের বালি।

এই প্রকারের বালি সমুদ্রের উপকুলে পাওয়া যায়। যা নদীর বালির মত চিকন ও গোলাকৃতি হয়ে থাকে। তবে এই প্রকারের বালিতে ক্ষতি কারক লবণের উপস্থিতি থাকে। তাই সমুদ্রের বালি নির্মাণ কাজে ব্যাবহার না করাই ভাল।

 

বালির ক্ষতিকারক পদার্থ সমূহ।

স থেকে প্রাপ্ত বালিতে বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকারক পদার্থ থাকতে পারে। যেমন, উদ্ভিদ জাত জৈব ও অজৈব পদার্থ, লবণ, কাদা এবং পলিকণা।

 

বালির ব্যাবহারিক মান অনুসারে তিন প্রকার হয়ে থাকে।

১। ভিটি বালি।

ভিটি বালির (FM) ফাইনাস মোডুলাস ০.৫০ থেকে ১.২০ হয়ে থাকে। এই ভিটি বালি সাধারণত বিভিন্ন রকমের ভরাট কাজে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

২।  লোকাল বালি।

লোকাল বালির (FM) ফাইনাস মোডুলাস ১.২০ থেকে ১.৫০ হয়ে থাকে। এই লোকাল বালি সাধারণত বিভিন্ন রকমের ইটের গাঁথুনির ও প্লাস্টারে কাজে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

৩। মোটা বালি।

মোটা বালির (FM) ফাইনাস মোডুলাস ১.৫০ থেকে ২.৫০ হয়ে থাকে।বাংলাদেশে সিলেটে এই মোট বালি বেশী পাওয়া যায়, তাই এটা সিলেট বালি হিসাবে বেশ পরিচতি। এই মোটা বালি সাধারণত বিভিন্ন প্রকার কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজে ফাইন এগ্রিগেট হিসাবে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

 

বালির গড় (FM) ফাইনাস মোডুলার বের করার নিয়ম।

উদারণ। ধরি একটা কাষ্টিং কাজে ২৫% লোকাল বালি এবং ৭৫% মোট সিলেট বালি ব্যাবহার করা হচ্ছে। বালি দুইটি ১ঃ৩ অনুপাতে ব্যাবহার করা হচ্ছে। অর্থা লোকাল বালি ১ ঘনফুট (cft) হলে, মোটা বালি ৩ ঘনফুট। উভয় প্রকার বালি (FM) ফাইনাস মোডুলাস যথাক্রমে ১.৫ ও ২.২ ।

 

প্রশ্ন হল দুই প্রকার বালির গড় (FM) ফাইনাস মোডুলার কত?

সমাধান,

দেওয়া আছে, লোকাল বালির পরিমাণ M1 = ১ এবং মোটা সিলেট বালির পরিমাণ M2 =

লোকাল বালির F1= ১.৫ ও এবং মোটা সিলেট বালির F2 = 2.2

উভয় প্রকার বালির গড় (FM) ফাইনাস মোডুলার = (M1 F1) + (M2 F2) ÷ ( M1+M2)

বা, = ( ১.৫) + ( ৩ ২.২ ) ÷ (১ + ৩)  = ২.০২৫ FM (উওর)।

 

বালি ব্যাবহারের সতর্কীকরণ।

ময়লা, পলি কাঁদা মাটি, এবং লবণাক্ত যুক্ত বালি নির্মাণ কাজে ব্যাবহার করা যাবে না। নির্মাণ কাজের পুর্বে বালি ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। যাতে করে বালির সাথে সংযুক্ত ডাল পালার পাতা, আগাছা, নুরি বের হয়ে যায়।

বালি ক্রয় - বিক্রয়ের সময় সতর্কীকরণ।

 

বালি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সতর্কীকরণ।

যেহেতু বালিতে পানি দিলে বালির আয়তন বেড়ে যায়। এমনকি বালিতে পানি দিলে উহার ওজন ৪% থেকে ৫ % পর্যন্ত ও আয়তন ২০% থেকে ২৫% পর্যন্ত বেড়ে যায়। শুকনো বালিতে পানি দিলেও ওজন ও আয়তন দুইটাই বেড়ে যায়। তাই বালি ক্রয় করার সময় শুকনো বালি ক্রয় করা উচিত। আর যদি ভেজা বালি  হয়, তাহলে দাম অবশ্যই কম হওয়া উচিত। এক কথায় শুকনো বালির দাম বেশী ও ভেজা বালির দাম কম হওয়া উচিত।

বালির আয়তন স্ফিতি সুত্র = ( ভেজা বালির আয়তন  ÷ শুকনো বালির আয়তন) ১০০ = ......%।

 

বালি মুজুত করার সঠিক নিয়ম।

১। বালি সমতল ও উঁচু স্থানে রাখা উচিত।

২। বালি রাখার পরে চারদিকে বন্ধ করে দিতে হবে।

৩। খোলামেলা স্থানে বালি মুজুত করা উচিত নয়।

বালির সূক্ষতার গুনাঙ্ক।

যে গুনাঙ্ক বালির আঁকার সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে তাকে বালির সূক্ষতার গুনাঙ্ক বলে। বালি যত ছোট দানাদার হয়, তার সূক্ষতার গুনাঙ্ক তত কম হয়। আবার বালির দানা যত বড় হয়, তার সূক্ষতার গুনাঙ্ক তত বেশী হয়। আমেরিকান প্রমাণ চালুনি (ASTM) এবং 4,8,16,30,50,100 নং এ বালিকে চালার পর অবশিষ্ট অংশের শতকরা হারের যোগফলকে ১০০ দ্বারা ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যায় তাকে বালির সূক্ষতার গুনাঙ্ক (FM = Fineness Modules) বলে।

 

Comments

Popular posts from this blog

বাড়ির নির্মাণে কত টুকু- রড, সিমেন্ট এবং ইটের প্রয়োজন

ভালো খাবার–মন্দ খাবার চেনেন তো?

ভারতের মুসলিমদের আশ্রয় দিক বাংলাদেশ-পাকিস্তান : তসলিমা