ঘরবন্দী সময়ে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
- Get link
- X
- Other Apps
ঘরবন্দী সময়ে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মাত্রা দিন দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ ও অঞ্চলে এটি দানবীয় ছায়া ফেলে রেখেছে। আমাদের দেশেও এতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জনজীবনে চলে এসেছে একটা স্থবিরতা। এ অবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের বিশেষ যত্ন এবং খাদ্য প্রয়োজন। অন্যথায় গর্ভকালে বিপদের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
করোনার এ সময় গর্ভবতী মায়েরা যা করবেন:
১. সুষম খাবার গ্রহণ
গর্ভবতী মায়েদের খাবারে বাড়তি
পুষ্টি প্রয়োজন। তাই অবশ্যই মায়েদের খাবার হতে হবে সুষম। আর এই বাড়তি
চাহিদা পূরণে তাঁদের প্রতিদিনের খাবারে সকালের নাশতায় অন্যান্য খাবারের
পাশাপাশি একটি করে সেদ্ধ ডিম, এক গ্লাস দুধ ও একটি মৌসুমি ফল যোগ করা যেতে
পারে। এ ছাড়া তাঁদের দুই বেলার প্রধান খাবারে ভাত/রুটির সঙ্গে দুই টুকরা
মাছ/মাংস, পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাল, শাকসবজি রাখতে হবে। রাতে ঘুমানোর এক ঘণ্টা
আগে আবার এক গ্লাস দুধ পান করতে পারেন। বাদাম, খেজুর, কিসমিস ও অন্যান্য
শুকনো ফল দিনের যেকোনো সময়ে গ্রহণ করতে পারবেন। সম্ভব হলে ২ থেকে ৩ দিন
অন্তর কচি ডাবের পানি পান করুন। সারা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে
হবে। এতে করে শরীরে থাকা দূষিত পদার্থগুলো খুব সহজেই শরীর থেকে বের হতে
পারবে।
যেহেতু এই সময়ে বাইরে যেতে মানা, তাই ঘরে তৈরি খাবার তাঁদের জন্য বেশি নিরাপদ। তবে খেয়াল রাখতে হবে, গর্ভবতী মায়ের যদি রক্তের শর্করা বেশি থাকে, তাঁকে অবশ্যই সাদা চালের ভাত, সাদা ময়দার বা আটার তৈরি যেকোনো খাবার পরিমিত গ্রহণ করতে হবে। কেননা এই সময়ে রক্তের শর্করা বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া দুটোই ঝুঁকিপূর্ণ।
এই অবস্থায় ফল ছাড়া অন্য কোনো খাবার কাঁচা না খাওয়াই ভালো, আর ফল খেতে হলে সেটি ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। তবে প্রতি বেলার খাবারে কাঁচা মরিচ ও লেবু রাখুন।
২. মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা
যতটা সম্ভব গর্ভবতী মায়েদের বর্তমান পরিস্থিতির ভয়াবহতা থেকে চাপমুক্ত থাকতে হবে। আর এই চাপ থেকে মুক্ত থাকতে তাঁরা বই পড়তে পারেন, পছন্দের গান শুনতে পারেন। মেডিটেশন করতে পারেন। প্রতিদিনের ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, পর্যাপ্ত বিশ্রামই দিতে পারে যেকোনো মানসিক চাপ থেকে মুক্তি।
৩. শারীরিক পরিচর্যা
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের ভারী কাজ করা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে বলা হয়, তবুও অনেক পরিবারেই গর্ভবতী মাকে একাই দৈনন্দিন কাজগুলো করতে হয়। এখন পরিবারের সবাই বাসায় থাকছেন, তাই এই সময়ে তাঁর সঠিক পরিচর্যায় পরিবারের সদস্যরা তাঁকে কাজগুলো করতে সাহায্য করতে পারেন। তাই বলে গর্ভবতী মা একেবারে কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন, সেটা নয়। ছোটখাটো কাজের পাশাপাশি শারীরিক কার্যক্ষমতা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য হালকা ব্যায়াম করতে হবে।
৪. প্রতিদিনের ওষুধ নিয়ম মেনে খাওয়া
গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের ওষুধ নিয়মিত সেবন করা প্রয়োজন। এই সময়ে গর্ভবতী মায়েদের কিছু সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়, যেমন ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। কারও অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যেহেতু তিনি বাইরে যেতে পারছেন না, তাই অবশ্যই তাঁকে যেকোনো জরুরি প্রয়োজনের জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৫. ওজন বৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখা
গর্ভাবস্থায় বাড়তি খাবার গ্রহণের ফলে মায়েদের ওজন বেড়ে যায়। তবে এই ওজন সাধারণত ১০ থেকে সাড়ে ১২ কেজি পর্যন্ত বাড়া স্বাভাবিক। তবে কর্মজীবী গর্ভবতী মা, যাঁদের এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসে সময় কাটাতে হচ্ছে, তাঁদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তে পারে। তাই অবশ্যই সঠিক খাবার বেছে নিন। এটা সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
৬. বাড়তি কিছু সাবধানতা
ক. অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, চিনি ও লবণযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
খ. প্যাকেটজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
গ. পাস্তুরিত নয় এমন দুধ, আধা সেদ্ধ মাছ/মাংস খাবেন না।
ঘ. যাঁদের ঘুমের সমস্যা হয়, তাঁরা বিকেলের পর কোলা ও ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ঙ. ধূমপান ও অ্যালকোহলের অভ্যাস থাকলে এই সময়ে পরিত্যাগ করুন, যা পরবর্তী সময়েও পরিত্যাগের চেষ্টা করবেন ।
সর্বোপরি চেষ্টা করুন পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘরে থাকার ও নিরাপদ থাকার।
লেখক: পুষ্টি পরামর্শক, নেসলে বাংলাদেশ।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment