কিটোজেনিক ডায়েটের সাতপাঁচ
- Get link
- X
- Other Apps
কিটোজেনিক ডায়েটের সাতপাঁচ
কার্বোহাইড্রেট নয়! শুধুমাত্র ফ্যাটকে রোজকার ডায়েটে সঙ্গী করেই নিয়ন্ত্রণে রাখুন ওজন। মানে যাকে বলে, ফ্যাট দিয়েই ফ্যাট বধ! কিটোজেনিক ডায়েটের ব্যাপারে জানাচ্ছেন নিউট্রশনিস্ট হেনা নাফিস।
Copyright: Sananda
আজকাল খাদ্যসচেতন মানুষের মুখে মুখে একটা শব্দবন্ধ বেশ জনপ্রিয় হয়েছে! তা হল ‘কিটোজেনিক ডায়েট’। সেলেব থেকে সাধারণ মানুষ, কোমরের মাপ ইঞ্চিখানেক কমানোর জন্য অনেকেই ঝুঁকছেন এই ডায়েটের দিকে। শুধু ওজনই নয়, টাইপ টু ডায়াবিটিসের প্রকোপও অনেকটাই কমাতে সক্ষম এই ডায়েট। কিটো ডায়েট আসলে এক ধরনের হাই-ফ্যাট লো-কার্ব ডায়েট। ডায়েট প্ল্যানের প্রায় ৮০ শতাংশ জুড়েই থাকে ফ্যাটযুক্ত উপকরণ, ১৫ শতাংশ প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেট থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির পরিমাণ ৫ শতাংশ। শরীরের প্রাথমিক জ্বালানির উৎস ধরা হয় কার্বোহাইড্রেটকে। সেই কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ যদি নিয়ন্ত্রিত করা যায়, তাহলে শরীর এনার্জি উৎপাদনের জন্য সঞ্চিত ফ্যাটের দিকে ঝুঁকবে। এই প্রক্রিয়াকে কিটোসিস বলে। কিটোসিসের ফলে খিদে পায় কম। আবার কিছু খেলেও তা অনেকক্ষণ পেটে থাকে। ফ্যাট-ফ্রি ফুড খেলে এতক্ষণ ধরে খিদে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
উইথড্রল সিম্পটম
কিটোজেনিক ডায়েটে থাকলে প্রথম প্রথম কিটো-ফ্লু হতে পারে। ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মাসল পেন, বমিবমিভাব, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। মাঝেমধ্যে ডিহাইড্রেশনও হতে পারে। এগুলো সবই উইথড্রল সিম্পটম। শরীর এতদিন ধরে গ্লুকোজ় পুড়িয়ে অভ্যস্ত ছিল। এখন সেই জায়গায় ফ্যাট পুড়িয়ে এনার্জি সংগ্রহ করছে। তাই, শরীরকে মানিয়ে নিতে দু’-তিন দিন সময় তো দিতেই হবে!
কিটোসিস প্রক্রিয়া
নিঃশ্বাসের সঙ্গে একটি মিষ্টি গন্ধ (বা ফ্রুটি স্মেল), অনেকটা নেল পলিশের মতো গন্ধ পেলে বুঝবেন যে, শরীর কিটোনস উৎপাদন করতে শুরু করে দিয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবার কিটোসিসের ফলে অ্যাপেটাইট হরমোনের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ফলে, শুরুর দিকে খিদে পাবে কম। কিটো ডায়েট শুরু করার তিন-চার দিন পর কিটোসিস প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কিটো ডায়েটের ভাল-মন্দ
এ ধরনের ডায়েটের ভাল দিক হল, এর মাধ্যমে খুব দ্রুত ওজন কমানো সম্ভব। যদিও এক একজনের ক্ষেত্রে তারতম্য হতে পারে, তবে সাধারণভাবে একজন মানুষ এক মাসে মোটামুটি পাঁচ কিলো মতো ওজন কমাতে পারবেন। অল্প খেলেও পেট ভর্তি থাকবে। তাই বারেবারে খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেবে না। অনেকের মতে, ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে এই ডায়েট অত্যন্ত উপযোগী। কারণ, ওজন কমানোর সঙ্গে সঙ্গে রক্তে গ্লুকোজ়ের মাত্রাও কমাতে সক্ষম এটি। আবার কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও এই ডায়েট কাজে আসতে পারে। কারণ কিটো ডায়েট রক্তচাপ কমায়, ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল কমায় আর গুড কোলেস্টেরল (এইচডিএল)-এর মাত্রা বাড়ায়।
কিন্তু এই ডায়েটের কয়েকটি অসুবিধেও আছে। অনেকেই
কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র ফ্যাট ইনটেকের উপর
ভরসা করতে অতটা স্বচ্ছন্দ নন। আবার অনেকেই শুরুর দিকের কিটো ফ্লুয়ের
লক্ষণগুলো সহ্য করতে না পেরে হাল ছেড়ে দেন মাঝপথেই! কিটো ডায়েটের ফলে
কোষ্ঠকাঠিন্য, ডিহাইড্রেশন
বা কিডনিতে পাথর জমলে হাড়ের স্বাস্থ্যও দুর্বল হতে থাকে। আবার
কার্বোহাইড্রেট একেবারে বন্ধ করে দিলে অনেকেরই পুষ্টির কিছু ঘাটতি দেখা
দেয়। দীর্ঘদিন ধরে হাই-ফ্যাট, লো-কার্ব ডায়েট মেনে চললে তা হার্টের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, যদি আপনার মনে হয় যে এই ডায়েটে আপনার কাজ হবে, তাহলে
ডাক্তারের পরামর্শে কিটো ডায়েট শুরু করুন। ভিটামিন ও মিনারেল
সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে। ফ্যাট লসের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন
ইনটেকও জরুরি। আর সবসময় হাইড্রেটেড থাকা জরুরি। তাই পর্যাপ্ত জল খান।
কী কী খাবেন
যে যে খাবারগুলো কিটোজেনিক ডায়েটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সেগুলি হল:
- অ্যাভোকাডো
- ফুল ফ্যাট দুগ্ধজাত দ্রব্য
- ডিমের কুসুম
- ফ্ল্যাক্স ও চিয়া সিড
- ডার্ক চকোলেট
- কোকো বাটার
- বাদাম
- মাখন
- ফ্যাটি মাছ যেমন স্যামন, টুনা, তেলাপিয়া, পমফ্রেট, ইলিশ
এছাড়াও পনির, চিজ়, লো-কার্ব সবজি যেমন লাউ, কুমড়ো, ব্রকোলি খেতে পারেন। ১০০ গ্রাম পনিরে ১৮ গ্রাম প্রোটিন, ২১ গ্রাম ফ্যাট ও মাত্র ১ গ্রাম কার্ব আছে! তাই, যাঁরা নিরামিশাষী, তাঁদের ডায়েটে নিয়মিত পনির থাকতেই পারে। চিকেনও কিটো ডায়েটের উপযোগী। অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, গ্রিক ইয়োগার্ট, বেরি খেতে পারেন।
কী কী খাবেন না
স্বভাবতই উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাওয়াদাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- যে খাবার ও পানীয়তে চিনির পরিমাণ অত্যধিক বেশি সেগুলোও খাবেন না। কোল্ড ড্রিঙ্ক যথাসম্ভব কম খান।
- আলু, কলা, সোডা, পাস্তা, ব্রেড, ভাত, ক্যান্ডি, ডোনাট খাবেন না।
- বার্গার, পিৎজ়া, ওটসও খাদ্যতালিকা থেকে একেবারে বাদ।
তবে এ ধরনের ডায়েট প্ল্যান শুরু করার আগে ডাক্তার ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে শুরু করবেন। অন্তত কিছুদিন পরে একবার সেলফ মনিটরিং প্রয়োজন। ডায়েট আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে, তা দেখার জন্য অবশ্যই একবার ওজনটা মাপিয়ে নিতে হবে। যদি দেখেন, এই ডায়েট দিব্যি কাজে দিয়েছে, তাহলে ডায়েটিশিয়ানকে একবার জিজ্ঞেস করে নিন আর কতদিন এই ডায়েট চালানো প্রয়োজন। তবে কিটো ডায়েটের মূল মন্ত্রই হল মেনটেনেন্স ডায়েট। অর্থাৎ, মাসখানেক কিটো ডায়েট করে দিব্যি ওজন কমিয়ে ফেলেছেন ভেবে যদি আবার পুরনো নিয়মে ফেরত যান, তাহলে গন্ডগোল! মাঝেমধ্যে নিয়ম একটু-আধটু ভাঙ্গতেই পারেন। তবে, নিয়ম ভেঙে খাওয়াদাওয়াকেই নিয়মিত অভ্যেসে পরিণত করবেন না।
Comments
Post a Comment