বাড়ি নির্মাণের কথা ভাবছেন?
- Get link
- X
- Other Apps
বাড়ি বানাচ্ছেন?
প্রতিটি বাড়ির নির্মান করার প্রথম শর্ত হচ্ছে অভিজ্ঞ আর্কিটেক্ট দিয়ে ডিজাইন এর কাজ করিয়ে নেয়া। ডিজাইন হচ্ছে একটি বাড়ির কাজের প্রথম ধাপ। এইখানেই মূলত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকে বাড়িটি কেমন হবে, কত বাজেট হবে এবং কতটুকুন কাজ করা হবে। ডিজাইনে যদি ত্রুটি থাকে তবে আপনার এত টাকার কাজ এর শুরুতেই গলদ হবে এবং পুরো কাজটি সুন্দর করে শেষ হবে না এবং বাজেট ফেইল করবে। আল্টিমেটলি আপনার টাকাটা একটা লস প্রজেক্টে ইনভেস্ট হবে যার বোঝা আপনার বাকি জীবন বয়ে চলতে হবে।
ডিজাইন করার আগে প্রথম কাজ হচ্ছে আপনার জমি ভিজিট করা। জমি না দেখে ডিজাইন করা হচ্ছে চোখ বন্ধ করে অন্ধকরে ঢিল ছোড়ার মতন। লাগতেও পারে বা নাও লাগতে পারে। কিন্তু সঠিক ডিজাইন প্রতিষ্টান প্রথমেই আপনার জমিটি ভিজিট করে স্বচক্ষে দেখে আসবে এবং ছবি তুলবে এবং ভিডিও করবে। প্রয়োজনে নিজেই মেজারমেন্ট করবে অথবা সার্ভেয়িং কোম্পানি দিয়ে সার্ভে করিয়ে নেবে। এর পরেই ডিজাইন এর কাজ শুরু হবে।
ডিজাইন বলতে মুলত বেশ কিছু ডিজাইন এর সমষ্টিকে আমরা বুঝিয়ে থাকি। এই ডিজাইনগুলো হচ্ছে ঃ
১) আর্কিটেকচারাল ডিজাইনঃ-
আর্কিটেকচারাল ডিজাইন হচ্ছে বিল্ডিং ডিজাইন এর প্রথম ধাপ। এই কাজ করবে একজন আর্কিটেক্ট এবং অবশ্যই তাকে বিএসসি আর্কিটেক্ট হতে হবে। বিশেষ করে হাইরাইজ এবং ডুপ্লেক্স ডিজাইন এর ক্ষেত্রে। প্রথমে বাড়ির মালিক কেমন ডিজাইন চাচ্ছেন এবং ডিজাইনে কি কি চাচ্ছেন সে ব্যাপারে ব্রিফিং হবে তার পরে আর্কিটেক্ট ডিজাইন এর কাজ শুরু করবেন। প্রাথমিক ভাবে একটি ডিজাইন দেখানোর পরে সেটার উপরে চেঞ্জ হবে এবং কিছু কাটছাটের পরেই ডিজাইনটি ফাইনাল হবে পরবর্তী কাজের জন্য । মনে রাখবেন ইঞ্জিনিয়ার কখনো আর্কিটেক্ট এর কাজ করে না। অনেক লোকাল এরিয়াতে দেখা যায় ইঞ্জিনিয়ার নিজেই আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করে ক্লায়েন্টকে কিছু একটা বুঝিয়ে দেন। যেটা সম্পুর্ণ ভাবে ভুল এবং অসম্পুর্ণ একটা কাজ।
২) থ্রিডি ডিজাইনঃ-
এর পরেই আর্কিটেকচারাল ডিজাইন যাবে থ্রিডি ভিজুয়ালাইজার এর কাছে। অনেক সময় আর্কিটেক্ট নিজেই থ্রিডি ডিজাইন করে থাকেন। তবে ভিজুয়ালাইজার কাজ করলে কাজের সৌন্দর্য বজায় থাকে । থ্রিডি ভিজুয়ালাইজার এর মুল কাজ হচ্ছে সুন্দর একটি বাড়ির শেইপ নিয়ে আসা। অনেক সময় থ্রিডি ভিজুয়ালাইজার আর্কিটেক্ট এর অনুমতি সাপেক্ষে ডিজাইনে কিছু বাড়তি কাজ করেন যা পরবর্তিতে ডিজাইনে আর্কিটেক্ট এডজাস্ট করে দেন।
৩) স্ট্রাকচারাল ডিজাইনঃ-
স্ট্রাকচারাল ডিজাইনার এর কাজ হচ্ছে মুলত এই যে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনটি তৈরি হলো তাতে কলাম, বীম এবং স্লাব এর রড এর ডিটেইলস ডিজাইন করা এবং ফাউন্ডেশন এর ডিটেইলস এর ডিজাইন করা। এই কাজ করতে অবশ্যই সয়েল টেস্ট রিপোর্ট এর সহযোগিতা নেবেন। সয়েল টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া কোন স্ট্রাকচারাল ডিজাইন মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়।
৪) ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইনঃ-
পরের ধাপের কাজ হচ্ছে এই ডিজাইন এর উপর ভিত্তি করে ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন করা। ইলেকট্রিক্যাল ডিজাইন গুরুত্বপুর্ন এই জন্যে যে, প্রায়ই দেখা যায় বিল্ডিং বানানোর পরে ইলেকট্রিক্যাল ওয়ারিং এর জন্য বীম কলাম কাটা হয়। যা বিল্ডিং এর লং টাইম স্ট্যাবিলিটি নস্ট করে দেয় এবং স্থায়িত্ব নস্ট করে দেয়। তাই প্রতিটা পয়েন্ট যেমন লাইট, ফ্যান, সুইচিং পয়েন্ট, এসির পয়েন্ট, এডজাস্ট ফ্যান, টিভির লাইন, ইন্টারনেট এবং পিএবিএক্স এর লাইন এর ডিটেইলস থাকবে।
৫) প্লাম্বিং ডিজাইনঃ-
এর পরেই প্লাম্বিং ডিজাইন এর কাজ হবে। বাড়ি করার পরে সবগুলা পাইপ উলঙ্গ অবস্থায় বের হয়ে থাকে যা আপনার সুন্দর বাড়িটাকেই উলঙ্গ করে সম্পুর্ন দৃষ্টিকটু করে ফেলে। তাই প্লাম্বিং ডিজাইন করিয়ে নিতে হবে। প্লাম্বিং ডিজাইন এর মধ্যে প্রতিটি বাথরুমে গিজার এর ব্যাবস্থা থাকবে। পুরো বাথরুমে হট এবং কোল্ড পাইপিং এর ব্যাবস্থা থাকবে এবং বাথরুমগুলো সুন্দর করে সাজানোর জন্য সমস্ত ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া কিচেনের লাইন এবং অন্যান্য পাইপিং এর জন্য আলাদা একটা ডিজাইন থাকবে।
৬) ফায়ার সেফটি ডিজাইনঃ-
এটি মূলত হাইরাইজ ভবনগুলোর জন্য বেশি প্রয়োজন হয়। ফায়ার সেফটি ডিজাইন এর কাজ মূলত করবে ফায়ার সম্পর্কে অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার। প্রায়ই দেখা যায় এই ডিজাইনে কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না যা পরবর্তীতে ভবনে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকে।
৭) এস্টিমেটিং এবং কস্টিংঃ-
সবার শেষে পুরো প্রজেক্টটি যাবে এস্টিমেটর এর কাছে। প্রতিটি ডিজাইন প্রতিষ্ঠানে একজন অভিজ্ঞ এস্টিমেটর থাকে। যার কাজ হচ্ছে প্রতিটি প্রজেক্ট এর একটি সঠিক এস্টিমেট এবং কস্টিং করা। আমরা এস্টিমেট এবং কস্টিং মানেই বুঝি যে কত টাকা খরচ হলো তার হিসেব। আসলে এটি ভুল। এস্টিমেট এ দুটি আলাদা পার্ট থাকে একটি হচ্ছে মালামালের কোয়ান্টিটি বের করা এবং অন্যটি হচ্ছে সেই হিসেবে বর্তমান বাজার রেট হিসেব করা। এখানে মালামালের কোয়ান্টিটি হচ্ছে আসল। প্রতিটি ফ্লোরে প্রতিটি আইটেম মালামাল কতটুকুন লাগছে সেই হিসেব করাটাই হচ্ছে আসল কাজ। এই হিসেব কাজে আসে বিল্ডিং এর মালামাল কেনার কাজে এবং অডিটিং এর কাজে। প্রায় বিল্ডিং এর নির্মান জনিত কাজে দুর্নীতি হয় যা খুব সহজে প্রাথমিক ভাবেই আটকানো যায় যদি সঠিক ভাবে এস্টিমেট এবং কস্টিং করা হয়।
৮) এপ্রোভাল ডিজাইনঃ-
এপ্রোভাল ডিজাইন এখন একটি অত্যাবশ্যকীয় কাজ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি প্রতিটি জেলায় এবং উপজেলায় ভবন নির্মান এর কাজ করাতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। হোক সেটা রাজউক, সিটিকর্পোরেশন ,পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন অফিস। এখানে উক্ত প্রতিষ্টান এর নিয়ম অনুযায়ী ডিজাইন শিট প্রস্তুত করে নির্দিষ্ট কাগজে প্রিন্ট করে আর্কিটেক্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার স্বাক্ষর করবেন এবং প্লান পাশের জন্য সাবমিট করবেন।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment