বাড়ির ফাউন্ডেশন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- Get link
- X
- Other Apps
বাড়ির ফাউন্ডেশন নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা।
সঠিক ফাউন্ডেশন ডিজাইন এবং সঠিক নির্মাণ খরচের এস্টিমেট নির্ধারন করতে হলে মাটি পরীক্ষা করা আবশ্যক। জেনে রাখা প্রয়োজন যে মাটি পরীক্ষা ছাড়া বাড়ি নির্মাণের ফাউন্ডেশনের ডিজাইন কখনো করা উচিত নয়। বাড়ি নির্মাণের শুরুতেই প্রথমে মাটি পরীক্ষার কাজটা করে নেওয়া উচিত। কারণ বাড়ির ফাউন্ডেশন ও স্টাকচারাল ডিজাইনের পৃর্বে অভিজ্ঞ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কতৃক মাটি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
১। সঠিক ভাবে ফাউন্ডেশন ডিজাইন নিশ্চিত করা।
২। সঠিক ভাবে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন নিশ্চিত করা।
৩। বাড়ির নির্মাণ ব্যয় বা এষ্টিমেট এন্ড কষ্টিং নিশ্চিত করা।
৪। বাড়ি ভূমিকম্প সহনশীল ও নিরাপদ কিনা নিশ্চিত করা।
৫। বাড়ি নির্মাণের পদ্ধতি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান নিশ্চিত করা।
বাড়ির ফাউন্ডেশনের জন্য মাটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ জেনে রাখুন।
মাটি পরিক্ষা বা Soil Test Report বুঝতে হলে মাটির পরিচিতি বা বিবরণ জানতে হবে এবং সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
মাটিকে নিম্নলিখিত ভাবে বিভক্ত করা যায়।
ক) রেসিডিউল সয়েল বা Residual Soil : প্রাকৃতিক ভাবে কঠিন বা
শক্ত, স্থায়ী রক বা শিলা থেকে রেসিডিউল বা Residual
Soil তৈরি হয়। এই ধরনের মাটি উদাহরণ হলো ব্যাসালট, গ্রানাইট, সেন্ডস্টোন, লাইমস্টোন
এবং লবণ ইত্যাদি।
খ)ট্রান্সপোর্টেড সয়েল বা Transported soil : এই ধরনের মাটি বায়ু ,নদী,
সাগর এবং বরফ এলাকা থেকে পৃথক হয়ে গঠিত হয়।
ফিল্ড অনুযায়ী মাটিকে বিভিন্ন অংশে বিভক্ত করা যায়ঃ
ক)বালি বা Sand, নুড়ি বা Gravel এবং বোল্ডার বা Boulder :
অর্থাৎ, মাটি যখন > ২০
সে.মি. সাইজের হয় তখন ……......> বোল্ডার।
মাটি যখন > ৩ মি.মি.
< ২০ সে.মি. তখন
............> নুড়ি বা Gravel ।
মাটি যখন < ৩ মি.মি. সাইজ...... তখন ............> বালু বা Sand
।
খ) পলিময় মাটি বা Silt soil :
নদ-নদী, পুকুর অথবা বন্যার পানিতে ভেসে আসা জৈব বা অজৈব
পদার্থ দিয়ে গঠিত যে মাটি, সেই মাটিকে পলি মাটি বলে।
গ) কাদামাটি বা Clay Soil : ইহা প্লাস্টাটিক জাতীয় কম ছিদ্রযুক্ত বা Low Permeability মাটি ।
ঘ) পিট মাটি বা Peat soil : গাছ পালা, লতা-পাতা এবং মৃত
প্রণী দেহ পঁচে যে আঁশযুক্ত মাটি গঠিত হয় তাকে পিট মাটি বা Peat Soil বলে।
ভাল মাটি বিজ্ঞান গবেষণা পদ্ধতি।
ক) টেস্ট বোরিং বা Test
Boring : বাড়ি নির্মাণ সাইটে লোহার রড বা ষ্টীল রড
এবং হ্যামার দিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্য অল্প গভিরতায় প্রবেশ করিয়ে যে পরিক্ষা করা হয়
তাকে টেস্ট বোরিং বা ইহাকে ম্যানুয়াল টেস্ট বলা যেতে পারে।
খ) টেস্ট পিট এবং সেফট বা Test Pit and Shaft : মাটি
বা Soil অগার নামক যন্ত্র ব্যবহার করে এই পরিক্ষা করা
হয়। যন্ত্রটির ওজন প্রায় ৪৫ কেজির মত হয়ে থাকে এবং এটি এক মিটার গভীরতা পর্যন্ত বোরিং করতে পারে।
গ) টেস্ট ড্রিলিং বা Test drilling :
আমাদের দেশের
প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধিতির মধ্য ড্রিলিং, কোর-ড্রিলিং
সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করা হয়।
ঘ) সাউন্ডিং রড বা Sounding rod :
সাউন্ডিং রড বা শব্দের
প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে মাটির রক বা শিলার অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
ইহা দ্বারা বিভিন্ন গভীরতায় মাটির রেজিস্ট্যান্স নির্ণয় করা হয়।
ঙ) ওয়াশ বোরিং বা Wash Boring : ওয়াশ বোরিং হচ্ছে মাটি অনুসন্ধান
পদ্ধতি যাহাতে কেজিং ড্রাইভ করা হয় এবং ভিতরের মাটি ও মাটি মিশ্রিত পানি বাহির করা
হয়। রক বা Hard Rock শক্ত শিলা ব্যতিত প্রায় সকল ধরনের
মাটিতে ব্যবহার করা হয়।
চ) টেস্ট পিট বা Test Pit : এটি অধিক ব্যয়-বহুল, কিন্তু
খুবই কার্যকারী পদ্ধতি সঠিক মাটি সনাক্তকরণের জন্য।
ছ) অগার বোরিং বা Augur Boring :
এটা একটি সাধারণ
যন্ত্র। এটা দ্বারা বালু এবং কাঁদামাটির ফাউন্ডেশন অনুসন্ধান করা হয়। এটা সাধারণত
৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট কাঠের অগার এবং ২.৫ সেন্টিমিটার পাইপ দিয়ে একটি
সেকশনে পরিপূর্ণ করা হয়।
জ) পারকিউশন বোরিং বা Percussion Boring :
ঞ) রোটারি বোরিং বা Rotary Boring :
মাটির ভারবহন ক্ষমতা নির্ণয়ের পদ্ধতি কয়টি।
উওরঃ যে ভুমিতে বা প্লটের মাটির উপর প্রতি বর্গ মিটারে যে
পরিমাণ ভর নিতে পারে তাকে ঐ জমি বা প্লটের মাটির ভারবহন ক্ষমতা বা Bearing Capacity বলে। মাটির ভারবহন ক্ষমতা টন/মিটার (T/M2)
স্কেলে হয়ে থাকে।
বাড়ি ফাউন্ডেশন ডিজাইনের পূর্বে জানতে হবে প্লট বা সাইটের মাটির
ভারবহন ক্ষমতা বা Bearing Capacity। মাটির গ্রহণযোগ্য ভারবহন ক্ষমতা জানতে হলে মাটি পরীক্ষার
রিপোর্ট সম্পর্কে ভালোভাবে অধ্যায়ন করতে হবে। মাটি পরীক্ষার রিপোর্র্ট দেখে বুঝতে হবে
নির্মাণ সাইটে কি ধরনের ফাউন্ডেশন ডিজাইন করা যেতে পারে। ফাউন্ডেশনের ফুটিং বা
পাইলিং মাটি পরিক্ষার রিপোর্টের উপর নির্ভর করে।
মাটির ভারবহন ক্ষমতা বা Bearing Capacity নিম্নে লিখিত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে।
ক) মাটির ধরণ, প্রকৃতি, ভৌগোলিক অবস্থান, ভৌত
ও রাসায়নিক ধর্মের উপর নির্ভর করে। এছাড়া মাটির ঘনত্ব বা Density, শেয়ার ষ্ট্রেন্থ বা Shear Strength ইত্যাদি।
খ) মাটির সংকোচন বা Clay Shrinkage মাটি কি
অবস্থায় আছে তার উপর নির্ভর করে।
গ) ভূমি হতে মাটির নিচে পানির লেভেল বা Water Level কত দূরে অবস্থান করে সেই বিষয় জানতে হবে।
মাটির ভারবহন ক্ষমতা ফাউন্ডেশনের আকৃতির উপর নির্ভর করে। সেগুলো হলো।
১। ফাউন্ডেশনের ধরণ, ফুটিং, কম্বাবাইন, র্যাফট
অথবা পাইলিং ইত্যাদির উপর।
২। ফাউন্ডেশনের ভারবহন ক্ষমতা আকার বা Size অথবা
আকৃতি বা Shape এর উপর নির্ভর করে। যেমনঃ ত্রিভুজ (Triangle),
গোলাকার (Circle), বর্গাকার (Square), চতুর্ভুজ (Quadrilateral), আয়তাকার (Rectangular),
পঞ্চোভুজ (Pentagon) ইত্যাদি।
৩। ফাউন্ডেশনের গভীরতার উপর নিরর্ভর করে।
কোহেসনলেস মাটি বা Cohesion Less Soil কাদামাটির বর্ণনা।
১। নুড়ি বা গ্রিভেল, মোটা বালু ৪৫ টন প্রতি মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2.
২। মধ্যম বালু, লুজ গ্রেভেল ২৫ টন প্রতি মিটার
ভার বহন করতে পারে T/M2 ।
৩। সুক্ষ ফাইন বালু, পলিমাটি ১৫ টন প্রতি
মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2.
কোহেসিভ মাটি বা Cohesive Soil কাদামাটির বর্ণনা।
১। বাসফট শেল- মাটি ৪৫ টন প্রতি মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2 ।
২। মিডিয়াম ক্লে- মাটি ২৫ টন প্রতি মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2।
৩। ময়েষ্ট(Moist) ক্লে- মাটি, কালো কটন মাটি ১৫ টন প্রতি মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2।
৪। সফট বা নরম ক্লে- মাটি ১০ টন প্রতি মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2
।
৫। খুব বেশী সফট ক্লে- মাটি ৫ টন প্রতি মিটার ভার বহন করতে পারে T/M2।
বাড়ির ডিজাইন নকশার লোড ক্যালকুলেশন।
বাড়ির ডিজাইন করার আগে অবশ্যই বিল্ডিং এ আগত লোড সম্পর্কে অবগত হতে হয় ।
ডেড লোডঃ কাঠামোর উপর
স্থায়ীভাবে চাপানো লোডই হলো ডেড লোড।
যেমন- ছাদ, বীম, দেয়াল,
কলাম, স্থায়ী যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ।কাঠামো,
মালামালের আকার-আকৃতির মাধ্যমে এ লোডের হিসাব করা হয়।
লাইভ লোডঃ কাঠামোর উপর অস্থায়ীভাবে
চাপানো লোডই হলো সচল লোড। যেমন- লোকজন, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি । সঠিকভাবে এ লোডের হিসাব করা কঠিন। তাই বিল্ডিং কোড
অনুযায়ী এসব লোড হিসাব করা হয় ।
উইন্ড লোডঃ কাঠামোর বাইরের পৃষ্ঠে ঝড়,
বাতাস ইত্যাদির কারনে উদ্ভুত লোডই, উইন্ড লোড
। কাঠামোর যেদিকে বাতাস লাগে, সেদিকে ভিত্তির উপর চাপ কমে
যায় এবং অপরদিকে চাপ বেড়ে যায়। এ লোডও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী হিসাব করা হয়।
মাটির চাপঃ কাঠামোর উপর মাটি কর্তৃক
প্রদত্ত চাপকেই মাটির চাপ বলে। র্যানকিনের সূত্র অনুযায়ী এ চাপ হিসাব করা হয় ।
পানির চাপঃ যখন কোন ভিত্তি পানি তলের
নিচে অবস্থিত থাকে, তখন পানি ঐ ভিত্তিকে আনুভূমিক ও
উর্দ্ধমুখী চাপ প্রয়োগ করে । এটাই পানির চাপ।
ভূকম্পন লোডঃ ভূ-কম্পন জনিত কারনে
সৃষ্ট বল সাধারনত ভিত্তিতে উলম্ব নিচের দিকে বা মোচড়ানোভাবে যে কোন দিকে কাজ করে।
ভূ-কম্পন বল বাংলাদেশের জন্য খুবই হুমকি সরূপ। তাই এটিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত।
তুষার লোডঃ শীত প্রধান দেশে সমতল
পৃষ্ঠে বা ছাদে প্রচন্ড বরফ পড়ে। তাই এসব দেশে এই লোডেরও হিসাব করা হয়।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment